OSI (Open System Interconnection) যা ISO ( International Standard Organization) কৃতক নির্ধারিত করা হয় । ISO 1974 সালের দিকে এই মডেলটি তৈরির কাজে হাত দেয় এবং 1977 সালের দিকে তা চুড়ান্ত ভাবে নির্ধরণ করা হয়। OSI Model মূলত একটি ওপেন স্ট্যান্ডার্ডস । যার উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কিং ডিভাইস সমুহ তৈরি করা হয় ।
এটি তৈরির মূল কারণ হল, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর প্রথম দিকে সকল নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ছিল হার্ডওয়্যার ওরিয়েন্টেড , এই সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার গুলি ছিল কোন না কোন কোম্পানি কৃতক তৈরি । যার ফলে এক কোম্পানির তৈরি করা ডিভাইস এর সাথে অন্য কোন কোম্পানির তৈরি করা ডিভাইস এর সাথে কমিউনিকেট করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই সমস্য সমাধানের জন্য তৈরি করা হয় OSI মডেল। যাতে করে সকল নেটওয়ার্ক ডিভাইস প্রস্তুতকারক কোম্পানি একই স্ট্যার্ন্ডাড অনুসরণ করে নেটওয়ার্ক ডিভাইস তৈরি করতে পারে।
নেটওয়ার্কের কাজ বোঝার জন্য এই মডেল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য । এটি যদিও একটি তাত্ত্বিক বিষয়, তবুও এর সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা দরকার। এই ধারণাই আপনাকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের কার্যপ্রণালী বুঝতে সাহায্য করবে। OSI মডেল নির্দেশ করে কীভাবে কম্পিউটার ও অন্যান্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে উঠবে ।
যখন আমরা একটি ডিভাইস থেকে আর একটি ডিভাইস থেকে আর একটি ডিভাইসে কোন তথ্য ট্রান্সমিট করি তখন একটি ডিভাইস অন্য ডিভাইস এর সাথে কিভাবে কমিউনিকেট করে এই তথ্যটি কিভাবে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশন এ পৌছাবে তা এই OSI মডেল এর মাধ্যমে নির্ধরণ করা হয়ে থাকে।
OSI Model মোট সাতটি লেয়ার এর সমন্বয়ে গঠিত। এগুলি হল যথা:
- অ্যাপ্লিকেশন (Application Layer)
- প্রেজেন্টেশন (Presentation Layer)
- সেশন (Session Layer)
- ট্রান্সপোর্ট(Transport Layer)
- নেটওয়ার্ক (Network Layer)
- ডাটালিঙ্ক (Datalink Layer)
- ফিজিক্যাল (Physical Layer)
এই লেয়ার সমুহকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় । Upper Layer এবং Lawyer Layer । এপ্লিকেশন, প্রেজেন্টেশন এবং সেশন এই তিনটিকে বলা হয় Upper Layer এবং.ট্রান্সপোর্ট, নেটওয়ার্ক, ডাটালিঙ্ক এবং ফিজিক্যাল বলা হয় Lawyer Layer । Upper Layer সমুহ কাজ করে অ্যপ্লিকেশন রিলেটেড এবং Lawyer Layer সমুহ কাজ করে হার্ডওয়ার রিলেটেড । নিন্মে এই লেয়ার সমুহ সর্ম্পর্কে বর্ণনা করা হল ।
অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার (Application Layer)
এটি OSI Model এর সপ্তম লেয়ার। এই লেয়ার কাজ নেটওয়ার্কে অনেকখানি দৃশ্যমান । এই লেয়ার সাধারণত ব্যবহারকারী ও নেটওয়ার্ক সার্ভিস এর মধ্য একটি Window হিসাবে কাজ করে । এর কাজ হল ব্যবহারকারীর অ্যাপ্লিকেশনকে সরাসরি সার্পোট করে এমন সব সার্ভিস প্রদান করা । যেমন:-
ডাটাবেস অ্যাকসেস ও অনুমোদন, ই-মেইল, ফাইল ট্রান্সফার ইত্যাদি । এই লেয়ার সাধারণত যে সকল কাজ করে থাকে তা হল নিন্মরুপ–
- রিসোর্স শেয়ারিং ও ডিভাইস রিডিরেকশন
- রিমোট ফাইল অ্যাক্সেস
- রিমোট প্রিন্টার অ্যাক্সেস
- ইন্টারপ্রসেস কম্যুনিকেশন (IPC)
- রিমোট প্রসেজিউর কল (RPC) সাপোর্ট
- নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট
- ডিরেক্টরি সার্ভিসেস
- ইলেকট্রোনিক মেসেজিং
প্রেজেন্টেশন লেয়ার (Presentation Layer)
এটি OSI Model এর ছষ্ঠ লেয়ার। প্রেজেন্টেশন লেয়ার মূলত ডাটার ফরমেট পরিবর্তন করে । অর্থাৎ ডাটা ট্রান্সলেটর হিসেবে কাজ করে । নেটওয়ার্কে ডাটার ফরমেট পিসির ফরমেট থেকে আলাদা হতে পারে । নেটওয়ার্ক ও পিসির চাহিদা মোতাবেক ডাটা পরিবর্তন বা ট্রান্সলেটর এর কাজ এই লেয়ার করে থাকে । এই লেয়ার যে কাজ সমুহ করে থাকে তা হল
- ক্যারেকটার কোড ট্রান্সলেশন
- ডাটা কনভার্সন
- ডাটার কমপ্রেশন
- ডাটা এনক্রিপশন এব ডিক্রিপশন
কনভার্সন: ডাটার কনভার্সন হল কম্পিউটার ডাটা এক ফরম্যাট থেকে অন্য ফরম্যাটে রুপান্তর করা। নেটওয়ার্কে আমরা যে ডাটাগুলি দেখতে পাই যেমন- jpg, doc, Mp4, exe ইত্যাদি। কম্পিউটার সাধারণত এই সকল ফরম্যাট বুঝতে পারে না। কম্পিউটার সাধারণত ASCII কোড এর মাধ্যমে এই ডাটা সমুহকে বুঝে থাকে। ডাটার এই পরিবর্তনকেই ডাটার কনভার্সন বলা হয়
কমপ্রেশন: কমপেশন বলতে ডাটার সাইজকে সংকুচিত করাকে বুঝায়। অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার থেকে যখন কোন ডাটা প্রেজেনটেশন লেয়ার এর কাছে আসে তা অনেক সময় অনেক বড় হয়ে থাকে। কারণ এর সাথে অনেক অপ্রয়োজনিয় ডাটা যেমন- স্পেস, লাইন, ব্রেক ইত্যাদি থাকে। এগুলিকে বাদ দিয়ে ডাটা প্যাকেটকে ছোট করাকেই কম্পেশন বলা হয়ে থাকে
এনক্রিপশন/ ডিক্রিপশন: যে প্রক্রিয়ায় ডেটাকে বিশেষ কোডের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয় তাকে এনক্রিপশন বলে। উৎস ডেটাকে এনক্রিপ্ট করে পাঠালে প্রাপক ঐ ডেটা ব্যবহারের পূর্বে ডিক্রিপ্ট করতে হয়। এনক্রিপ্ট করা ডেটাকে নির্দিষ্ট নিয়মে মূল ডেটায় পরিবর্তন করাকে বলা হয় ডিক্রিপশন। যদি আমরা কোন ডাটাকে এনক্রিপ্ট না করে প্লেইন টেক্সে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশনে প্রেরণ করে থাকি তাহলে যে কেউ এই ডাটাকে হ্যাক করে নিয়ে ডাটাকে পড়তে পারবে কিন্তু আমরা এই ডাটাকে এনক্রিপশন করে প্রেরণ করি তাহলে কেউ যদি এই ডাটাকে হ্যাক করে, তবুও সে এই ডাটাকে পড়তে পারবে না। কারণ এনক্রিপ্টেড এই ডাটাকে ডিক্রিপ্ট করা খুব কঠিন।
সেশন লেয়ার (Session Layer)
এটি OSI Model এর পঞ্চম লেয়ার। এই লেয়ার সাধারণত নেটওয়ার্কের ভিন্ন ভিন্ন হোস্ট সমুহের মাঝে কানেকশন সেটআপ এবং টারর্মিনেশন এর কাজ করে থাকে । এছাড়া ডায়ালগ কন্ট্রোল (Dialogue Control) এর কাজও এই লেয়ার করে থাকে ।
যখন কোনো ডিভাইস সংযোগ গড়তে চায় তখন সেশন লেয়ার জেনে নেয় কোন ডিভাইস এই কম্যুনিকেশনে অংশ নেবে এবং কী পরিমাণ ডাটা একসাথে পাঠাবে, কতক্ষণ পর পর পাঠাবে একে বলা হয় ডায়ালগ কন্ট্রোল।
ট্রান্সপোর্ট লেয়ার (Transport Layer)
এটি OSI মডেল এর চতুর্থ লেয়ার । ট্রান্সপোট লেয়ার এর কাজ হল সঠিক ভাবে ডাটা পাকেট সরবরাহ করা । এছাড়া ডাটা প্যাকেটের সঠিক ক্রম , ডাটার উপস্থিতি , ডাটার ডু্প্লিকেট রোধ এই কাজ সমুহ এই লেয়ার করে থাকে। তাছাড়া কোন ডাটা যদি অনুমোদিত পাকেট এর চেয়ে বড় হয় , তাহলে সেই পাকেট কে ভেঙ্গে ছোট ছোট পাকেট বিভক্ত করে। এবং পুনরায় এই ডাটাকে আবার জোড়া দেওয়ার কাজটিও ট্রান্সপোর্ট লেয়ার করে থাকে। ডাটাকে এই ভাঙ্গা এবং জোড়া দেওয়াকে বলা হয় ফ্রাগমেন্টেশন এবং ডি-ফ্রাগমেন্টেশন । এছাড়াও ডাটা প্যাকেট প্রবাহের গতি নিয়ন্ত্রনও এই স্তর করে থাকে।
এক ডিভাইস থেকে অন্য এক ডিভাইসে ডাটা পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্য ট্রান্সর্পোট লেয়ার দুই ধরনের ট্রান্সমিশন ব্যাবহার করে:
- কানেকশন ওরিয়েন্টড (Connection Oriented)
- কানেকশনলেস (Connection less)
কানেকশন ওরিয়েন্টড:এই ধরনের ট্রান্সপোর্ট এর ক্ষেত্রে যে দুটি ডিভাইস এর সাথে কমিউনিকেট হবে তারা অগে থেকেই একটি সেশন প্রতিষ্ঠা করে নেয়। যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের মধ্যে কমিউনিকেশন কমপ্লিট না হয় ততক্ষন পর্যন্ত তাদের মধ্যে সংযোগ অবিচ্ছিন্ন থাকে। তারা একটি ACK মেছেজ এর মাধ্যমে এই কমিউনিকেশন করে থাকে। কানেকশন ওরিয়েন্টড ট্রান্সমিশন এর বৈশিষ্ঠ হল-
- নির্ভরযোগ্যতা
- ধীরগতি
- প্যাকেট রিট্রান্সমিশনের সুবিধা
TCP এর ক্ষেত্রে এই ধরণের ট্রান্সমিশন মোড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার কারনে এই ধরণের ট্রানসমিশন অনেক সিকিউর হয়ে থাকে।
কানেকশনলেস: এই ধরনের ট্রান্সমিশন এর ক্ষত্রে দুটি ডিভাইস এর মধ্যে আগে থেকেই কোন সংযোগ প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন পড়ে না। কানেকশনলেস ওরিয়েন্টেড এ ডাটা পাঠানোর আগে প্রেরক গ্রাহক এর সাথে কোন ACK মেছেজ এর মাধ্যাম কানেকশন তৈরি করে থাকে না। কানেকশনলেস ট্রান্সমিশন এর বৈশিষ্ঠ হল-
- অনির্ভরযোগ্যতা
- দ্রুত পরিবহনের সুবিধা
- ডাটা রিট্রান্সমিশন সুবিধা নেই
UDP এর ক্ষেত্রে এই ধরনের ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।
ট্রান্সর্পোট লেয়ারে আমরা যে ডাটার যে ফরমেটটি পেয়ে থাকে তাকে সেগমেন্ট বলা হয়ে থাকে। এই সেগমেন্ট এর মধ্যে যা যা থাকে হা হল সোর্স পোর্ট নাম্বার, ডেস্টিনেশন র্পোট নাম্বার এবং ডাটা।
নেটওয়ার্ক লেয়ার (Network Layer)
এটি OSI Model এর তৃতীয় লেয়ার। এই লেয়ার নেটওয়ার্ক ভুক্ত প্রেরক ও গ্রাহক সিস্টেম এর মধ্যে লজিক্যালি সম্পর্ক গড়ে তোলে । এই স্তর প্রেরক প্রান্তে ট্রান্সপোট লেয়ার হতে প্রাপ্ত উপাত্তকে প্যাকেটে বিভক্ত করে এবং গ্রাহক প্রান্ত হতে প্রাপ্ত ডাটাকে উপাত্তে পরিণত করে । এই লেয়ার ডাটা রাউটিং এর কাজ করে । এই লেয়ার IP Address নিয়ে কাজ করে । একটি নেটওয়ার্কে একাধিক পথ থাকতে পারে গ্রন্তব্যে ডাটা পৌছানোর জন্য , এই লেয়ার এই একাধিক লেয়ার হতে সবচেয়ে ভাল এবং কার্যকরি পথটি নির্বচন করে ডাটা প্রবাহের জন্য। অর্থাৎ ডাটা প্রবাহের জন্য সঠিক রুট নির্ণয় করে নেটওয়ার্ক লেয়ার।
নেটওয়ার্ক লেয়ারে ডাটার ফরম্যাট হয় প্যাকেট। এই প্যাকেট এর মধ্যে যা যা থাকে তা হল, সোর্স আইপি অ্যাড্রেস, ডেস্টিনেশন আইপি অ্যাড্রেস এবং ট্রান্সপোর্ট লেয়ার থেকে পাওয়া সেগমেন্ট।
ডাটালিঙ্ক লেয়ার (Data-link Layer)
ডাটা লিঙ্ক লেয়ার OSI মডেল এর দ্বিতীয় স্তর । এ স্তর ফিজিক্যাল লিঙ্ক এর মাধ্যমে প্রেরক ও গ্রাহক সিস্টেম এর মধ্যে ত্রুটি মুক্ত ভাবে ডাটা বা উপাত্ত স্থানান্তর এর কাজ করে থাকে । যেহেতু ফিজিক্যাল স্তর কোন প্রকার অর্থবোধক কাঠামো ছাড়াই উপাত্তকে বিট আকারে প্রেরক হতে গ্রাহক সিস্টেম এ স্থানান্তর করে থাকে। তাই ট্রান্সমিশন লাইনে চলমান অবস্থায় এই সকল উপাত্তে যেকোন প্রকার ভুল ত্রুটি হতে পারে । ডাটালিঙ্ক স্তর এই কাঠামো বিহীন ডাটা বিট সমুহকে গ্রহন করে ত্রুটি মুক্ত ভাবে স্থানান্তর করে থাকে।
ডাটা লিঙ্ক স্তর সাধারণ নিন্মলিখিত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে ।
- নেটওয়ার্ক স্তরকে সুসংহত করা
- ডাটা বিটের ফ্রেমিং এবং সিক্রোনাইজেশন করা
- ডাটার ত্রুটি নিয়ন্ত্রন করা
- ডাটার প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করা
- অ্যাড্রেসিং করা
- লিঙ্ক ব্যবস্থাপনা করা
ডাটালিঙ্ক লেয়ার ডাটার ফরম্যাট হয় ফ্রেম। এই ফ্রেম এর মধ্যে থাকে সোর্স MAC অ্যাড্রেস, ডেস্টিনেশন MAC অ্যাড্রেস এবং নেটওয়ার্ক লয়ার থেকে পাওয়া প্যাকেট।
ফিজিক্যাললেয়ার (Physical Layer)
এটি OSI Model এর প্রথম লেয়ার। এ লেয়ার এর প্রধান কাজ হল বিভিন্ন ডিভাইস এর সাথে ফিজিক্যল সর্ম্পক স্থাপন করা এবং ফিজিক্যল কানেকশন এর মাধ্যমে ডাটা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা স্থানান্তর করা। এই লেয়ারে ডাটা সমুহ সধারণত বিট আকারে বিভিন্ন ফিজিক্যল লিংক এর মাধ্যমে স্থনান্তর হয়ে থাকে। ফিজিক্যাল মাধ্যম সমুহ হল
- ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল
- ফাইবার অপটিক ক্যাবল
- কোএক্সিয়াল ক্যাবল
- ওয়্যারলেস মিডিয়া
আশা কি OSI Model কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে এবং এর প্রত্যেকটি লেয়ার সম্পর্কে আপনারা খুব ভাল ধারণা পেয়েছেন। আপনাদের যদি এই কনটেন্টটি ভাল লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।
thanks brother for this article
ReplyDelete